স্তন ক্যানসার
:quality(90)/)
আপনি যখন এই লেখাগুলো পড়ছেন ঠিক সেই মিনিটে পৃথিবীতে প্রায় ৪ জন নতুন করে ব্রেস্ট ক্যান্সার (Breast Cancer) এ আক্রান্ত হচ্ছে। নারী দেহে ঘটিত সকল Cancer এর মধ্যে Breast Cancer অন্যতম। ক্যান্সার চিকিৎসা এবং এর ব্যবস্থাপনার দীর্ঘ ও বন্ধুর পথ পাড়ি দেবার আগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার আশেপাশের মানুষদের Breast Cancer সম্পর্কে সহায়তা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এ লেখাগুলো এ রোগ সম্পর্কে যেমন কিছু প্রচলিত ভুল ধারনা ভেঙ্গে দেবে তেমনি সৃষ্টি করবে সচেতনতা যা আক্রান্ত মানুষটিকে নিয়ে যাবে নিরাময়ের দ্বারপ্রান্তে।
ব্রেস্ট1 চর্বি ও বিশেষ ধরণের টিস্যু দিয়ে তৈরি। এর ভিতরে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট গ্রন্থি যেখানে বুকের দুধ তৈরি হয়। গ্রন্থিগুলো ব্রেস্টের বোটার সাথে সূক্ষ্ম নালি দিয়ে যুক্ত থাকে যাকে বলা হয় দুগ্ধ গ্রন্থি। বগলের তলায়ও ব্রেস্ট টিস্যু ও লসিকা গ্রন্থি রয়েছে। লসিকা গ্রন্থি যা লাসিকা তন্ত্রের অংশ, ইহা বুকের হাড়ের কাছে এবং কলারবোনের পেছন পর্যন্ত বিস্তৃত। চিকিৎসক এ লসিকা গ্রন্থিগুলোকে নোড (Node) বলে চিহ্নিত করে থাকেন।
শরীরের টিস্যু ছোট ছোট কোষ দিয়ে তৈরি। ব্রেস্ট ক্যান্সার এর সময় ব্রেস্টের কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে ওঠে এবং এক একটি মাংসপিন্ডে পরিণত হয়। এ মাংসপিন্ড গুলোকে টিউমার বলা হয়। অনেক সময় টিউমারগুলো ক্যান্সারে রূপ নেয়, তখন এদেরকে প্রাথমিক ক্যান্সার হিসাবে সনাক্ত করা হয়। কখনো কখনো ক্যান্সার কোষগুলো রক্ত বা লসিকাতন্ত্রের মাধ্যমে অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এটাকে সেকেন্ডারি ক্যান্সার বলা হয়। ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রকৃতি ভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। নারী ও পুরুষ উভয়ই ব্রেস্ট ক্যান্সার এ আক্রান্ত হতে পারে। তবে নারীদের এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।
১। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়
২। পারিবারিক ইতিহাস
৩। পূর্বে ব্রেস্টে ক্যান্সার বা টিউমার থাকা
৪। অস্বাভাবিক বড় ব্রেস্ট
৫। হরমোনাল চিকিৎসা
৬। পূর্বে ব্রেস্টে রেডিওথেরাপি
৭। স্থূলতা
৮। মদ্যপান
ক্যান্সারের স্টেজ বলতে বোঝায় এটি কতটা বড় এবং এটি ছড়িয়ে পড়ছে কিনা।
ক্যান্সারের গ্রেড বলতে বোঝায় ক্যান্সারটি কত দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে।
রিসেপ্টর
ব্রেস্টের কোষগুলোতে বিভিন্ন ধরণের রিসেপ্টর থাকে যেখানে হরমোন ও প্রোটিন যুক্ত হয়ে ব্রেস্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু কখনও কখনও এ রিসেপ্টরগুলো অধিকমাত্রায় সংবেদনশীল (অ্যাকটিভেট) হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে অতিরিক্ত হরমোন ও প্রোটিন এ রিসেপ্টরগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে অস্বাভাবিকভাবে কোষ বিভাজন শুরু করে যা পরবর্তীতে ক্যান্সার এ রূপ নেয়।
রিসেপ্টর ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ
হরমোন রিসেপ্টর পজিটিভ (ইআর/পিআর/উভয়ই পজিটিভ) (ER/PR/Both positive) ব্রেস্ট ক্যান্সার।
এইচইআর২ (HER2) রিসেপ্টর পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার।
ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার (ইআর, পিআর ও এইচইআর২ নেগেটিভ) (ER/PR/HER2 Negative)
ব্রেস্ট কান্সারের চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেঃ
১। অপারেশন (সার্জারি)
২। ঔষধ (কেমোথেরাপি, হরমোনাল থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি)
৩। রেডিওথেরাপি।
ক্যান্সারের গতি প্রকৃতি অনুযায়ী চিকিৎসকরা একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারন করে থাকেন। যেমন অপারেশন এবং তারপর কেমোথেরাপি এবং/অথবা রেডিওথেরাপি অথবা অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি/রেডিওথেরাপি দেয়া হতে পারে।
১। অপারেশন (সার্জারি)¹
প্রাথমিক (প্রাইমারী) ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সার্জারি হচ্ছে চিকিৎসার প্রথম ধাপ। টিউমারটির আকৃতির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক সার্জারির মাধ্যমে টিউমার ও তার আশেপাশের কিছু সুস্থ টিস্যু অপসারন করেন।
চিকিৎসক সাধারণত দুটি উপায়ে অপারেশন করে থাকেন
ব্রেস্টে ক্যান্সারের অংশটুকু অপসারন (লাম্পেকটমি)
সম্পূর্ণ ব্রেস্ট অপসারন (মাস্টেকটমি)
অপারেশনের সময়, যদি কোন লসিকা গ্রন্থিতে ক্যান্সার থেকে থাকে সার্জন সাধারণত সেটিও অপসারন করে থাকেন।
সার্জারির পরে একজন ক্যান্সার রোগীর জীবন⁶
ব্রেস্ট ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবার দুঃসংবাদটা নেয়া বেশীরভাগ রোগী এবং তার স্বজনদের জন্য কঠিন। এ সময় প্রয়োজন হয় প্রিয়জনের পাশে থাকা এবং দৃঢ় মনোবল যা কিনা সাহায্য করতে পারে একজন আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্যান্সার চিকিৎসার বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে।
প্র াথমিক মানসিক আঘাতের পর একজন রোগী সর্বপ্রথম যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তা হল সার্জারি পরবর্তী নতুন দেহাকৃতির সাথে মানিয়ে নেয়া। সার্জারি পরবর্তী প্রথম কয়েক মাস অনেক সময় রোগী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন। বিশেষত সার্জারির চিহ্ন এবং পাশ্বপ্রতিিয়া গুলো তাকে তাড়া করে ফেরে। এ সময় মানসিক সাহায্যের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় বিশেষ কিছু ব্যায়াম এবং উপযুক্ত সুষম খাদ্যের। শারীরিকভাবে সেরে উঠার জন্য যে ব্যায়ামগুলো প্রয়োজন তার কোনটাই কঠিন কিছু নয়। নিয়মিত ও সঠিকভাবে নিচের শারীরিক কসরতগুলো করলে তা আপনাকে এ নতুন অবস্থায় মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
ব্যায়াম এর নিয়মাবলী⁷
সার্জারির প্রথম সপ্তাহ পর
ওয়ার্ম আপ এবং কুল ডাউন ব্যায়াম করুন। এর মধ্যে রয়েছে এক ও দুই নম্বর ব্যায়াম গুলো।
দ্বিতীয় সপ্তাহ ও পরবর্তীতে
ওয়ার্ম আপ, বেসিক, এ্যাডভান্স এবং কুল ডাউন ব্যায়ামগুলো করুন। ব্ যায়ামের সময়কাল একটি দিক নির্দেশনা হিসাবে দেয়া হয়েছে এবং আপনি আপনার নিজস্ব গতিতে ব্যায়াম করতে পারেন।
আপনি সার্জারির পরের দিন থেকে ব্যায়াম করতে পারেন
প্রতি ব্যায়াম এর মাঝে ৫ মিনিট বিরতি দিন
দিনে তিনবার ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন তা হতে পারে সকালে, দুপুরের কোন সময় এবং বিকালে।
আপনার ব্রেস্ট সার্জারি হয়ে থাকলে ব্যায়াম শুরুর আগে আপনার চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্ট এর সাথে কথা বলে নিন।
ব্যায়াম করার সময় আপনি ব্যাথা অনুভব করতে পারেন। মাংসপেশিতে কিছুটা টান অনুভব করা স্বাভাবিক। যদি আপনি নড়াচড়া বা ব্যায়াম করতে অস্বস্তিবোধ করেন তবে আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
ওয়ার্ম আপ ও কুল ডাউন ব্যায়াম
আপনি যে কোন ব্যায়াম শুরুর পূর্বে ১ ও ২ নং ব্যায়াম করে নিন এবং শেষে আবার তা করুন। আপনি দাড়িয়ে কিংবা বসে ব্যায়ামগুলো করতে পারেন।
কাঁধ সংকুচিত করা
প্রথমে সমস্ত শরীর রিলাক্স করে নিন।
কাঁধ সঙ্কুচিত করে কান বরাবর উঠান এবং একই ভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসুন।
:quality(90)/)
কাঁধ বৃত্তাকারে ঘুরানো
প্রথমে সমস্ত শরীর রিলা করে নিন।
কাঁধ সঙ্কুচিত করে সামনের দিক দিয়ে কান বরাবর উঠান এবং ঘুরিয়ে পেছনের দিক হয়ে নিচে নামান।
:quality(90)/)
বেসিক ব্যায়াম
সাধারণ ব্যায়াম আপনি সার্জারির এক সপ্তাহ পর থেকে করতে পারবেন । ব্যায়ামগুলো বসে বা দাড়িয়ে করতে পারবেন। তবে এগুলো করার পূর্বে ওয়ার্ম আপ ব্যায়ামগুলো করে নিন। ব্যায়ামগুলো করার সময় খেয়াল রাখবেন হাত যেন কাঁধের (৯০ ডিগ্রীর) উপর উঠে না যায়।
বাহু নত করা
দুই হাত উপরে উঠান এবং দেহের সামনের দিকে রাখুন।
কনুই ভাঁজ করে আলতোভাবে হাত কাঁধের উপর রাখুন।
এখন ধীরে ধীরে কনুই নিচের দিকে আনুন আর উপরে উঠান।
:quality(90)/)
বিকল্প পদ্ধতি
দুই হাত উপরে উঠান এবং দুই দিকে প্রসারিত করুন।
কনুই ভাঁজ করে আলতোভাবে হাত কাঁধের উপর রাখুন।
এখন ধীরে ধীরে কনুই নিচের দিকে আনুন এবং উপরে উঠান।
:quality(90)/)
পিছনে আঁক কাটা
হাত দুটো দুই দিকে প্রসারিত করুন এবং কনুই বাঁকা করে নিচের নিন।
:quality(90)/)
এবার দু হাতকে কাঁধের হাড়ের নিচের দিকে মিলিত করুন।
:quality(90)/)
কনুই উপরে উঠানো
আপনার হাত দুটো মাথার পেছনে স্থাপন করুন এবং কনুই দুটো মুখের সামনে একত্র করুন।
হাত দুটো একই স্থানে রেখ ে কনুই দুপাশে প্রসারিত করুন এবং আবার একই অবস্থানে ফিরিয়ে আনুন।
:quality(90)/)
আরও কিছু এ্যাডভান্স ব্যায়াম
সার্জারীর দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে আপনি এই ব্যায়ামগুলো শুরু করতে পারেন (যদি আপনার সেলাই বা নল অপসারণ না করে তবে অপেক্ষা করুন)। এই ব্যায়াম করার সময় আপনার হাত অবশ্যই কাঁধের উপর পর্যন্ত নিয়ে যাবেন।
অবশ্যই ওয়ার্ম আপ করার কথা ভুলবেন না। যদি আপনার ঘাঁ না শুকিয়ে থাকে, ইনফেকশন থাকে বা ব্যথা অনুভব করেন তবে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দেয়াল বেয়ে উঠা
সোজা হয়ে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দাঁড়ান
কাঁধ বরাবর দেয়ালে দুই হাত রাখুন।
সোজা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হাত আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠান।
আঙ্গুল ব্যবহার করে হাতকে উপরে উঠাতে পারেন এবং যতক্ষণ ব্যাথা অনুভব করবেন না ততক্ষণ সর্বোচ্চ উচ্চতা পর্যন্ত উঠাতে চেষ্টা করুন।
হাত উপরে উঠানোর পর সেখানে ধরে রাখুন এবং ১০ পর্যন্ত গণনা করুন।
একইভাবে হাত দুটোকে আস্তে আস্তে আগের অবস্থানে নিয়ে আসুন।
প্রতিবার সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠানোর চেষ্টা করুন।
:quality(90)/)
এবার একপাশ হয়ে দেয়ালে কাছাকাছি দাঁড়ান।
কাঁধ স্বাভাবিক রেখে কনুই নিচের দিকে নিয়ে হাত দেয়ালের উপর রাখুন
সামনের দিকে তাকিয়ে হাতটি আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠান এবং কনুই সোজা করার চেষ্টা করুন।
উপরে উঠানোর পর স্থির হন এবং ১০ পর্যন্ত গণনা করুন।
ধীরে ধীরে হাত কে আবার পূর্বের অবস্থানে নিয়ে আসুন।
:quality(90)/)
হাত উপরে উঠানো
মেঝে কিংবা বিছানায় শুয়ে পড়ুন এবং স্বাভাবিক থাকার জন্য মাথার নিচে কুশন বা বালিশ দিন।
শুয়ে পড়ার পর তিন থেকে চারবার লম্বা নিঃশ্বাস নিন।
কাঁধকে স্বাভাবিক রাখুন যেন কানের নিচে ভাঁজ না হয়ে যায়।
দুই হাত একসাথে মুষ্টিবদ্ধ করুন। কনুই সোজা রেখে হাত মাথার উপরে নিয়ে যান এবং অসুবিধা না হওয়া পর্যন্ত মাথার পিছনের দিকে নামাতে থাকুন।
স্থির হয়ে থাকুন ও ১০ পর্যন্ত গণনা করুন তারপর হাতকে আগের অবস্থানে নিয়ে আসুন।
বিকল্প
যদি আপনার শুয়ে থাকতে অসুবিধা হয় বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তবে ব্যায়ামগুলো বসা অবস্থায় পেছনের দিকে হেলে করতে পারেন।
:quality(90)/)
কনুই ঠেলা
পেছন দিক হয়ে শুয়ে হাতদুটো মাথার পেছনে রাখুন এবং কনুই দুটোকে দুদিকে প্রসারিত করুন।
এবার কনুই দুটোকে মেঝে বরাবর নিচের দিকে নামান যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অসুবিধা অনুভব না করেন।
নিচের দিকে নামানোর পর স্থির হন এবং ১০ পর্যন্ত গুণুন। যে সকল রোগীকে রেডিওথেরাপী দেয়া হয় তাদের জন্য এই ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ থেরাপী দেয়ার সময় একইভাবে রোগীকে শোয়ানো হয়।
:quality(90)/)
আয়নায় নিজের মুখ⁶
সার্জারি পরবর্তী নিজের দেহের নতুন গড়নের সাথে মানিয়ে নিতে কষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই মনোবিদরা সার্জারির ঠিক পরেই রোগীকে আয়নার সামনে দাঁড়াতে নিষেধ করেন। দুই থেকে তিন দিন পর যখন রোগী কিছুটা ধাতস্ত হন তখন তার আয়নার সামনে দাঁড়ানো উচিত। সেলাই ও কাটার দাগ দেখে ভীত হবার কিছু নেই। মনে রাখতে হবে একটা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জয়ী হবার জন্য এটা একটা প্রাথমিক পদক্ষেপ। আপনি যদি রোগী হন তাহলে পাশে রাখুন তাকে যিনি আপনাকে সাহস দিতে পারবেন আর যদি আপনি রোগীর স্বজন হন তাহলে পাশে থাকুন তার যাতে আপনি তাকে সাহস যোগাতে পারেন।
কথা বলুন সহযোদ্ধাদের সাথে⁶
এমন কিছু অভিজ্ঞতা আছে যা কেবল মাত্র আক্রান্তরাই অনুধাবন করতে পারেন। তাই সার্জারি এবং তার পরবর্তী চিকিৎসা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, আর এ থেকে উত্তরণের উপায়গুলো জানার জন্য কথা বলুন তার সাথে যাকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
সার্জারির পরে রোগীদের মনে প্র ায়শই এ প্রশ্ন আসে যে, টিউমার তো শরীরে নেই তাহলে কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির প্রয়োজন কেন? সার্জারির পরে কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির উদ্দেশ্য সাধারণত দুটি। প্রথমত, অনেক সময় চিকিৎসকের পক্ষে সম্পূর্ণ টিউমার অপসারণ সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত, ক্যান্সার পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা। এ দুটো কারণে চিকিৎসক দীর্ঘমেয়াদী কেমোথেরাপি এবং/অথবা রেডিওথেরাপি প্রেস্ক্রাইব করেন।
২. রেডিওথেরাপি⁸
রেডিওথেরাপি উচ্চ-শক্তির এক্স-রে ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলিকে ধ্বংস করে। প্রায় ক্ষেত্রেই অপারেশন এর পর ক্ষত শুকিয়ে গেলে রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। এটি ক্যান্সার পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি কমায়।
৩. কেমোথেরাপি⁹
কেমোথেরাপিতে ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করার জন্য ক্যান্সার বিরোধী (সাইটোটক্সিক) ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
৪. টার্গেটেড থেরাপি¹⁷,¹⁸
কেমোথেরাপি এবং হরমোনাল থেরাপি ছাড়াও নতুন আরও কার্যকর চিকিৎসা হল টার্গেটেড থেরাপি যা স্বাভাবিক কোষগুলোর ক্ষতি না করে নির্দিষ্ট কোষ ধ্বংস করতে পারে। এছাড়াও ক্যান্সারের বৃদ্ধি বা দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারে।
কখনও কখনও টার্গেটেড থেরাপি সেই সকল জায়গায় কাজ করে যেখানে কেমোথেরাপি কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। টার্গেটেড থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির তুলানায় সীমিত। ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রতি ৫ জনে ১ জন নারীর বিশেষ প্রোটিন এইচইআর২ (HER2) পজিটিভ থাকে এবং এ ধরনের ক্যান্সার অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় আগ্রাসী হয়ে থাকে। এ ধরনের প্রোটিনকে লক্ষ্য করে অনেক ধরনের টার্গেটেড থেরাপি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাস্টুজুমাব, পারটুজুমাব, ট্রাস্টুজুমাব এমটানসিন, ল্যাপাটিনিব ইত্যাদি।
ক্যান্সার চিকিৎসার কারণে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। ঔষধভেদে এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
ক্লান্ত বা অসুস্থ বোধ করা
ডায়ারিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
মুখের ভিতর ক্ষত
চুল পরে যাওয়া
রক্তশূন্যতা
ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া
ক্ষুধামন্দা
ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ
এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঔষধ এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চিকিৎসা শেষ হব ার পর বেশিরভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই চলে যায়।
আর সব চিকিৎসা থেকে ক্যান্সার ব্যবস্থাপনা কিছুটা হলেও ভিন্নতর। চিকিৎসা শেষ হয়ে যাবার পরও
ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতে হয়। চিকিৎসকরা এ ফলোআপের সময়সূচী রোগীর অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারণ করে। সাধারণত চিকিৎসা শেষ হবার পর ২-৩ বছর প্রতি তিন মাসে একবার এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ১-২ বার চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সমর্থন করেন। এ সময় চিকিৎসকরা ক্যান্সার পুনরায় ফিরে এসেছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করেন।16
সার্জারি ও তার পরবর্তী চিকিৎসার পর ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পূর্ণ ভাল হলেও এর ফিরে আসার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায়না। এমনকি অনেক সময়ই রোগীর অজান্তেই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে পারে মস্তিষ্ক, হাড়, যকৃত ও ফুসফুস সহ দেহের বিভিন্ন স্থানে। অথবা এমনও হতে পারে ক্যান্সার একই জায়গায় বাসা বাঁধতে পারে কিংবা আক্রমণ করতে পারে সুস্থ ব্রেস্টে। এক্ষেত্রে ক্যান্সারের গতি প্রকৃতি একটু আগ্রাসী ধরণের হলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে পার্শ্ববর্তী টিস্যু, বগলের অংশে এবং চামড়ায়। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিশ্চিত করে যথাসময়ে দ্রুত চিকিৎসা যা প্রকারন্তরে বাড়িয়ে দেয় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা।
ক্যান্সার চিকিৎসার অন্যতম বাঁধা হল দুশ্চিন্তা, ভয় এবং উৎকণ্ঠা। চিকিৎসা চলাকালীন সময় কিংবা চিকিৎসার পরে বারবার হাসপাতালে যাওয়া এবং একইসাথে চিকিৎসা চালিয়ে নেয়া দুশ্চিন্তা বা ভয়ের কারণ। কতদিন এভাবে চলবে, এ ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দেয় রোগী এবং তার স্বজনদের মাঝে। আর এই দুশ্চিন্তা প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে বাঁধাগ্রস্ত করে যা রোগীর সেরে ওঠাকে বিলম্বিত করতে পারে এবং ঘুম কিংবা খাওয়ার উপর প্রভাব ফেলে। তাই এই দুশ্চিন্তা, ভয় ও উৎকণ্ঠাকে নিজ থেকে দূরে রাখতে একজন মনোবিদ বা মনোবিজ্ঞানীর ভূমিকা অনেক। আপনার চিকিৎসক এ ধরণের কারও সাথে কাউন্সেলিং এর কথা বলতে পারেন যা আপনাকে মনের দিক থেকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
:quality(90)/)
বিষন্নতাকে ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে অবহেলিত উপসর্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আসলে একজন রোগী কিংবা তার পরিবারের কাছে ক্যান্সারকে মেনে নেওয়া একটা কঠিন ব্যাপার। তাই ক্যান্সার নির্ণয়ের পর, চিকিৎসা চলাকালীন সময় এমনকি চিকিৎসা শেষেও আপনার উপর বিষন্নতা ভর করতে পারে। আপনার কানে বারবার একটা প্রশ্ন বাজতে পারে, কেন আমি? আনেক সময় ক্যান্সার নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে বিষন্নতা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। তবে অনেক চিকিৎসক একে গুরুত্বের সাথে দেখেন এবং ক্যান্সার এর সাথে বিষন্নতার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাই আপনি যদি হতাশাগ্রস্ত এবং জীবন সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েন, মানুষের সঙ্গ এমনকি কখনও কখনও খুব কাছের মানুষের সঙ্গও অসহ্য মনে হয় কিংবা লোকচক্ষুর আড়ালে ঘরের অন্ধকারকেই আপনার বেশী ভাল লাগে তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে আপনি বিষন্নতায় ভুগছেন যা এ অবস্থায় খুবই সাধারন ঘটনা। আপনার এ সমস্যার কথা চিকিৎসকের কাছে খুলে বলুন কিংবা নিজেই চলে যান একজন মনোবিদের কাছে আর কথা বলুন মন খুলে। মনে রাখবেন, চিকিৎসার ফল পরিপূর্ণ ভাবে পেতে হলে রোগীর দৃঢ় মানসিকতা অপরিহার্য। তাই ভাল লাগেনা বোধটাকে বাড়তে না দিয়ে পরামর্শ নিন বিশেষজ্ঞের যাতে আপনার ক্যান্সার চিকিৎসার সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
:quality(90)/)
নিজেকে সাহায্য করুন
রোগ হওয়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এতে আপনার কোন হাত নেই। অতএব এ বিষয়ে নিজেকে দোষ দেয়াটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং এতে বিষন্নতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই চেষ্টা করুন পছন্দের কাজগুলো করার এবং উপভোগ করুন জীবনটাকে। নিজের প্রতি বিশ্বাস আনুন। ইতিহাস বলে আত্মবিশ্বাসী মানুষরাই বার বার জয়ী হয়েছে।
প্রতিটি দিনকে একটি নতুন দিন হিসাবে ভাবুন
ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে ধীরে ধীরে সেগুলো অর্জন করার চেষ্টা করুন। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খুব বেশী দুশ্চিন্তা করবেন না। লক্ষ্যগুলো হতে পারে এমন যে, ‘আমি আমার পুরানো বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বলব’ বা ‘বাসার চারপাশে আমি কিছুক্ষন হাঁটবো’। যারা বিষন্ন বা উদ্বিগ্ন থাকে তাদের জন্য এটা একটা উল্লেখযোগ্য অর্জন হতে পারে। আপনি হয়ত রাতারাতি পরিবর্তন অনুভব করবেন না তবে সময়ের সাথে অনেক ভাল লাগা খুঁজে পাবেন।
ব্যায়াম
ব্যায়াম করলে শরীরে এন্ডোরফিন নামক রাসায়নিকের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের ভাল লাগা অনুভব করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম শরীর ও মন দুটোকেই প্রফুল্ল রাখে। শারীরিক সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়াম করুন এবং সেই সাথে খেয়াল রাখবেন শরীরে উপর যেন অতিরিক্ত চাপ না পড়ে যায়। শুরুটা করতে পারেন হালকা শারীরিক কসরত যেমন সহজ যোগ-ব্যায়াম কিংবা কিছু সময় হাঁটা দিয়ে।
সুষম খাবার গ্রহণ
সুষম খাবার গ্রহণ সুষম খাবার গ্রহণ ক্যান্সার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুষম ও পরিমিত খাবার গ্রহণ করলে আপনার দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে যা বিষন্নতা কাটিয়ে উঠার পাশাপাশি কেমোথেরাপির এবং রেডিওথেরাপির ধকল মোকাবেলায় সাহায্য করবে।
চিত্তবিনোদনের কৌশল
কারো কারো ক্ষেত্রে বিষন্নতা কাটিয়ে উঠার জন্য চিত্তবিনোদন পরিপূরক চিকিৎসা হিসাবে গণ্য হয়। চিত্তবিনোদনের কৌশল যেমন ধ্যান, হিপনোথেরাপী, ম্যাসেজ আপনাকে বিষন্নতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যের সাথে কথা বলা
আপনার কাছের মানুষের সাথে কথা বলতে ভয় পাবেন না। যদিও মনের কথা সহজভাবে প্রকাশ করার জন্য সঠিক কাউকে খুঁজে পাওয়া সবার জন্য সহজ নয়। আপনার ভাবনা বা কষ্টগুলো অন্য কারও কাছে প্রকাশ করলে আশ্চর্যজনক ভাবে আপনার ভাল লাগবে যা পরোক্ষণে আপনার দুশ্চিন্তা এবং বিষন্নতাকে কমিয়ে দিবে।
তথ্য আপনাকে শক্তি যোগাবে
একটি ভাল বই বা লেখা আপনার ভাবনা বা অনুভুতিগুলোকে জানতে সাহায্য করবে, সেই সাথে করে তুলবে আপনাকে সাহসী যা পরবর্তীতে আপনার চলার পথের ভয়গুলো সরিয়ে দেবে। ক্যান্সার রোগীর জীবন বিষয়ক অনেক বই বা পত্রিকার আর্টিকেলগুলো ইন্টারনেটের বাস্তবতায় খুবই সহজলভ্য। একটু সময় নিয়ে পড়ে ফেলুন অথবা চোখ বুলিয়ে নিন সেই সব সাহসী মানুষের জীবনীতে যারা এ যুদ্ধে মোকাবেলা করেছেন বুক চিতিয়ে সাহসের সাথে। এতে আপনি মুক্তি পেতে পারেন দুশ্চিন্তা বা উৎকণ্ঠা থেকে। আবার এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন ভুল বা আংশিক তথ্য আপনার কাছে চলে না আসে। প্রয়োজনে আপনার চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
নিদ্রাহীনতা
একটি নির্ঘুম রাত কিভাবে একজন মানুষকে ক্লান্ত, খিটখিটে মেজাজের এবং অবসান্ত করে তোলে তা আমরা সবাই জানি। একজন রোগীর ক্ষেত্রে বিষণ্ণতা তাঁর ঘুমের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যদি প্রায়ই আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তবে তা আপনার চিকিৎসককে জানান। নিম্নের পরামর্শগুলো মেনে চললে নিদ্রাহীনতা দূর করা সহজ হতে পারে।
১। প্রতিদিন একই সময় ঘুমোতে এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন
২। প্রতিদিন কিছু হালকা ব্যায়াম করুন
৩। দিনের বেলা ঘন ঘন ঘুমের অভ্যাস পরিহার করুন যা আপনাকে রাতের বেলা দীর্ঘ ও গভীরভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে
৪। বিকালের পরে ক্যাফেইন (চা, কফি, চকলেট) পরিহার করুন।
৫। ঘুমানোর আগে হাল্কা নাস্তা করলে ক্ষুধার কারনে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
৬। ঘুমানোর আগে সফ্ট গান শুনুন অথবা বিছানায় শুয়ে হালকা কোন বই পড়ুন।
৭। নিশ্চুপ বা শান্ত পরিবেশ এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ঘুমানোর চেষ্টা করুন।