আপনি যখন এই লেখাগুলো পড়ছেন ঠিক সেই মিনিটে পৃথিবীতে প্রায় ৪ জন নতুন করে ব্রেস্ট ক্যান্সার (Breast Cancer) এ আক্রান্ত হচ্ছে। নারী দেহে ঘটিত সকল Cancer এর মধ্যে Breast Cancer অন্যতম। ক্যান্সার চিকিৎসা এবং এর ব্যবস্থাপনার দীর্ঘ ও বন্ধুর পথ পাড়ি দেবার আগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার আশেপাশের মানুষদের Breast Cancer সম্পর্কে সহায়তা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এ লেখাগুলো এ রোগ সম্পর্কে যেমন কিছু প্রচলিত ভুল ধারনা ভেঙ্গে দেবে তেমনি সৃষ্টি করবে সচেতনতা যা আক্রান্ত মানুষটিকে নিয়ে যাবে নিরাময়ের দ্বারপ্রান্ তে।
ব্রেস্ট1 চর্বি ও বিশেষ ধরণের টিস্যু দিয়ে তৈরি। এর ভিতরে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট গ্রন্থি যেখানে বুকের দুধ তৈরি হয়। গ্রন্থিগুলো ব্রেস্টের বোটার সাথে সূক্ষ্ম নালি দিয়ে যুক্ত থাকে যাকে বলা হয় দুগ্ধ গ্রন্থি। বগলের তলায়ও ব্রেস্ট টিস্যু ও লসিকা গ্রন্থি রয়েছে। লসিকা গ্রন্থি যা লাসিকা তন্ত্রের অংশ, ইহা বুকের হাড়ের কাছে এবং কলারবোনের পেছন পর্যন্ত বিস্তৃত। চিকিৎসক এ লসিকা গ্রন্থিগুলোকে নোড (Node) বলে চিহ্নিত করে থাকেন।
শরীরের টিস্যু ছোট ছোট কোষ দিয়ে তৈরি। ব্রেস্ট ক্যান্সার এর সময় ব্রেস্টের কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে ওঠে এবং এক একটি মাংসপিন্ডে পরিণত হয়। এ মাংসপিন্ড গুলোকে টিউমার বলা হয়। অনেক সময় টিউমারগুলো ক্যান্সারে রূপ নেয়, তখন এদেরকে প্রাথমিক ক্যান্সার হিসাবে সনাক্ত করা হয়। কখনো কখনো ক্যান্সার কোষগুলো রক্ত বা লসিকাতন্ত্রের মাধ্যমে অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এটাকে সেকেন্ডারি ক্যান্সার বলা হয়। ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রকৃতি ভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। নারী ও পুরুষ উভয়ই ব্রেস্ট ক্যান্সার এ আক্রান্ত হতে পারে। তবে নারীদের এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।
১। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়
২। পারিবারিক ইতিহাস
৩। পূর্বে ব্রেস্টে ক্যান্সার বা টিউমার থাকা
৪। অস্বাভাবিক বড় ব্রেস্ট
৫। হরমোনাল চিকিৎসা
৬। পূর্বে ব্রেস্টে রেডিওথেরাপি
৭। স্থূলতা
৮। মদ্যপান
ক্যান্সারের স্টেজ বলতে বোঝায় এটি কতটা বড় এবং এটি ছড়িয়ে পড়ছে কিনা।
ক্যান্সারের গ্রেড বলতে বোঝায় ক্যান্সারটি কত দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে।
ব্রেস্টের কোষগুলোতে বিভিন্ন ধরণের রিসেপ্টর থাকে যেখানে হরমোন ও প্রোটিন যুক্ত হয়ে ব্রেস্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু কখনও কখনও এ রিসেপ্টরগুলো অধিকমাত্রায় সংবেদনশীল (অ্যাকটিভেট) হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে অতিরিক্ত হরমোন ও প্রোটিন এ রিসেপ্টরগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে অস্বাভাবিকভাবে কোষ বিভাজন শুরু করে যা পরবর্তীতে ক্যান্সার এ রূপ নেয়।
হরমোন রিসেপ্টর পজিটিভ (ইআর/পিআর/উভয়ই পজিটিভ) (ER/PR/Both positive) ব্রেস্ট ক্যান্সার।
এইচইআর২ (HER2) রিসেপ্টর পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার।
ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার (ইআর, পিআর ও এইচইআর২ নেগেটিভ) (ER/PR/HER2 Negative)
ব্রেস্ট কান্সারের চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেঃ
১। অপারেশন (সার্জারি)
২। ঔষধ (কেমোথেরাপি, হরমোনাল থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি)
৩। রেডিওথেরাপি।
ক্যান্সারের গতি প্রকৃতি অনুযায়ী চিকিৎসকরা একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারন করে থাকেন। যেমন অপারেশন এবং তারপর কেমোথেরাপি এবং/অথবা রেডিওথেরাপি অথবা অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি/রেডিওথেরাপি দেয়া হতে পারে।
প্রাথমিক (প্রাইমারী) ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সার্জারি হচ্ছে চিকিৎসার প্রথম ধাপ। টিউমারটির আকৃতির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক সার্জারির মাধ্যমে টিউমার ও তার আশেপাশের কিছু সুস্থ টিস্যু অপসারন করেন।
চিকিৎসক সাধারণত দুটি উপায়ে অপারেশন করে থাকেন
ব্রেস্টে ক্যান্সারের অংশটুকু অপসারন (লাম্পেকটমি)
সম্পূর্ণ ব্রেস্ট অপসারন (মাস্টেকটমি)
অপারেশনের সময়, যদি কোন লসিকা গ্রন্থিতে ক্যান্সার থেকে থাকে সার্জন সাধারণত সেটিও অপসারন করে থাকেন।
ব্রেস্ট ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবার দুঃসংবাদটা নেয়া বেশীরভাগ রোগী এবং তার স্বজনদের জন্য কঠিন। এ সময় প্রয়োজন হয় প্রিয়জনের পাশে থাকা এবং দৃঢ় মনোবল যা কিনা সাহায্য করতে পারে একজন আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্যান্সার চিকিৎসার বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে।
প্রাথমিক মানসিক আঘাতের পর একজন রোগী সর্বপ্রথম যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তা হল সার্জারি পরবর্তী নতুন দেহাকৃতির সাথে মানিয়ে নেয়া। সার্জারি পরবর্তী প্রথম কয়েক মাস অনেক সময় রোগী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন। বিশেষত সার্জারির চিহ্ন এবং পাশ্বপ্রতিিয়া গুলো তাকে তাড়া করে ফেরে। এ সময় মানসিক সাহায্যের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় বিশেষ কিছু ব্যায়াম এবং উপযুক্ত সুষম খাদ্যের। শারীরিকভাবে সেরে উঠার জন্য যে ব্যায়ামগুলো প্রয়োজন তার কোনটাই কঠিন কিছু নয়। নিয়মিত ও সঠিকভাবে নিচের শারীরিক কসরতগুলো করলে তা আপনাকে এ নতুন অবস্থায় মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
সার্জারির প্রথম সপ্তাহ পর
ওয়ার্ম আপ এবং কুল ডাউন ব্যায়াম করুন। এর মধ্যে রয়েছে এক ও দুই নম্বর ব্যায়াম গুলো।
দ্বিতীয় সপ্তাহ ও পরবর্তীতে
ওয়ার্ম আপ, বেসিক, এ্যাডভান্স এবং কুল ডাউন ব্যায়ামগুলো করুন। ব্যায়ামের সময়কাল একটি দিক নির্দেশনা হিসাবে দেয়া হয়েছে এবং আপনি আপনার নিজস্ব গতিতে ব্যায়াম করতে পারেন।
আপনি সার্জারির পরের দিন থেকে ব্যায়াম করতে পারেন
প্রতি ব্যায়াম এর মাঝে ৫ মিনিট বিরতি দিন
দিনে তিনবার ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন তা হতে পারে সকালে, দুপুরের কোন সময় এবং বিকালে।
আপনার ব্রেস্ট সার্জারি হয়ে থাকলে ব্যায়াম শুরুর আগে আপনার চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্ট এর সাথে কথা বলে নিন।
ব্যায়াম করার সময় আপনি ব্যাথা অনুভব করতে পারেন। মাংসপেশিতে কিছুটা টান অনুভব করা স্বাভাবিক। যদি আপনি নড়াচড়া বা ব্যায়াম করতে অস্বস্তিবোধ করেন তবে আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
আপনি যে কোন ব্যায়াম শুরুর পূর্বে ১ ও ২ নং ব্যায়াম করে নিন এবং শেষে আবার তা করুন। আপনি দাড়িয়ে কিংবা বসে ব্যায়ামগুলো করতে পারেন।
প্রথমে সমস্ত শরীর রিলাক্স করে নিন।
কাঁধ সঙ্কুচিত করে কান বরাবর উঠান এবং একই ভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসুন।